যে কারণে স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব শয়তানের অতি পছন্দের

স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব মহান আল্লাহর কাছে অতি জঘন্য আর শয়তানের অতি পছন্দের বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সর্বদা ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও সমঝোতা একান্ত কাম্য। অন্যদিকে বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক—হালাল কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরে ভুল-বোঝাবুঝি বা একে অপরকে অসম্মান করার চূড়ান্ত পর্যায়ে বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাকের ঘটনা ঘটে।

এ ছাড়া পরকীয়া, স্ত্রীর উচ্চ বিলাসিতা ও স্বামীর আচরণেও অনেক সময় বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এ জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কখনো কোনো দ্বন্দ্ব তৈরি হলে প্রথমেই তা মিটিয়ে ফেলা উচিত। স্ত্রীদের পক্ষ থেকে স্বামীর অবাধ্যতা বা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ঝামেলা হলে সংশোধনের জন্য চারটি ধাপ রয়েছে। কোনোটিতেই কাজ না হলে পঞ্চম ধাপে বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাকের প্রসঙ্গ আসে।

সেটি ঘৃণিত কাজ। আন্তরিক হলে প্রথম চারটি ধাপেই সমাধান হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

 

স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব শয়তানের অতি পছন্দের : স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব শয়তানের অতি পছন্দের। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটলে তার আনন্দের সীমা থাকে না।

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ইবলিস শয়তান সমুদ্রের পানির ওপর তার সিংহাসন স্থাপন করে। অতঃপর মানুষের মধ্যে ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার জন্য সেখান থেকে তার বাহিনী চারদিকে পাঠায়। এদের মধ্যে সে শয়তানই তার কাছে সর্বাধিক সম্মানিত যে মানুষকে সবচেয়ে বেশি ফিতনায় নিপতিত করতে পারে। তাদের মধ্যে একজন ফিরে এসে বলে, আমি এরূপ এরূপ ফিতনা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করেছি। তখন সে (ইবলিস) প্রত্যুত্তরে বলে, তুমি কিছুই করোনি।

তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর এদের অপর একজন এসে বলে, আমি মানব সন্তানকে ছেড়ে দিইনি, এমনকি দম্পতির মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ করে দিয়েছি। তিনি (সা.) বলেন, শয়তান এ কথা শুনে তাকে কাছে বসায় আর বলে—তুমিই উত্তম কাজ করেছ। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় জাবির (রা.) এটাও বলেছেন যে অতঃপর ইবলিস তার সঙ্গে আলিঙ্গন করে। (মুসলিম, হাদিস : ৭২৮৪)

স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব নিরসনের চারটি ধাপ : স্বামীর অবাধ্যতা বা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের টানাপড়েনের ক্ষেত্রে সংশোধনের চারটি ধাপ রয়েছে।

প্রথম ধাপ : তাদের নরমভাবে বোঝাতে হবে। স্বাভাবিক ভুল-বোঝাবুঝি বা সামান্য ঝামেলা হলে নরমভাবে বোঝালে স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসায় তা কেটে যাবে।

দ্বিতীয় ধাপ : তাদের বিছানা নিজের থেকে পৃথক করে দেওয়া। এই পৃথকতার মাধ্যমে সে স্বামীর অসন্তুষ্টি উপলব্ধি করে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে পারে।

তৃতীয় ধাপ : তাতেও সংশোধন না হলে মৃদু শাসন করা যাবে। তবে মারপিট রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পছন্দ নয়। (ইবন হিব্বান, হাদিস : ৪১৮৯, আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪৬, ইবন মাজাহ, হাদিস : ১৯৮৫)

চতুর্থ ধাপ : উল্লিখিত তিনটি ব্যবস্থার কোনোটিই ফলপ্রসূ না হলে উভয় পক্ষের মুরব্বি-অভিভাবক অথবা মুসলিমদের কোনো শক্তিশালী সংস্থা তাদের (অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর) মধ্যে আপস করিয়ে দেওয়ার জন্য (স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন) দুজন বিজ্ঞ, বিশ্বস্ত ও দ্বিনদার সালিস নির্ধারণ করে দেবে। তারা তাদের মধ্যে মীমাংসা করার ব্যবস্থা করবে।

এসব বিষয় কোরআনে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা করো তাদের সদুপদেশ দাও, তারপর তাদের শয্যা বর্জন করো এবং তাদের মৃদু প্রহার করো। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অন্বেষণ কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রেষ্ঠ, মহান। আর তাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ আশঙ্কা করলে তোমরা স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করো; তারা উভয়ে নিষ্পত্তি চাইলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৪-৩৫)

বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক এড়িয়ে চলা : বিবাহ-বিচ্ছেদ মানবজীবনের সবচেয়ে নিকৃষ্ঠতম হালাল কাজ। স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ ইসলামে কোনোভাবেই কাম্য নয়। সর্বাবস্থায় নর-নারী প্রত্যেকেরই তা পরিহার করা সর্বোত্তম পন্থা। ইবনু ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট হালাল কাজ হলো তালাক।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৭৮)

পরিশেষে বলা যায়, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পবিত্র, পরিচ্ছন্ন এবং সৃষ্টিগত। এ সম্পর্ক দুনিয়ায় শুরু হলেও দ্বিনদার হলে জান্নাতে অনন্তকালের জন্য আবার মিলিত হওয়া যায়। এ সম্পর্কের ভেতর যেন কোনোভাবেই ভাঙন না ধরে এ ব্যাপারে খুব সচেতন হওয়া উচিত।