বাকিংহাম প্রাসাদের পরই বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান বাড়ি বলে ধরা হয় অ্যান্টিলিয়াকে। ভারতের সবচেয়ে দামি বাড়ি এটি, যার মালিক রিলায়্যান্সের কর্ণধার মুকেশ আম্বানি। মুম্বাইয়ের আল্টামাউন্ট রোডের ২৭ তলার এই প্রাসাদটি প্রায় চার লাখ বর্গফুটের। উচ্চতায় ৫৬৮ ফুট।
বিশ্বের অন্যতম বিলাসবহুল প্রাসাদ অ্যান্টিলিয়ায় সত্যিই এসি নেই?
আটলান্টিক মহাসাগরের একটি দ্বীপের নামে নামাঙ্কিত অ্যান্টিলিয়াতেই স্ত্রী নীতা আম্বানি, বড় ছেলে আকাশ, বড় পুত্রবধূ শ্লোকা, ছোট ছেলে অনন্ত ও ছোট পূত্রবধূ রাধিকা এবং নাতি-নাতনিকে নিয়ে থাকেন মুকেশ। তার বাড়িতে রয়েছে জিম, স্পা, বিউটি পার্লার, বলরুম, তিনটি সুইমিং পুল, ৫০ আসনবিশিষ্ট সিনেমা হল, তিনটি হেলিপ্যাডসহ নানা সুযোগ-সুবিধা।
অ্যান্টিলিয়া এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, ভূমিকম্পের মাত্রা রিখটার স্কেলে আট হলেও এই বাড়ি ভেঙে পড়বে না। এ ছাড়া ২৭ তলার এই বাড়িটির কোনো একটি তলার সঙ্গে অন্য তলার মিল নেই। ৫৬৮ ফুট উঁচু ২৭ তলা এই বাড়িটি তৈরি করেছে শিকাগোর নির্মাণ সংস্থা ওয়েল অ্যান্ড পারকিনস।
দুবাইয়ের বুর্জ খলিফার চেয়েও উঁচু এই বাড়িজুড়ে শুধুই ঐশ্বর্যের হাতছানি। মুকেশ ও নীতার স্বপ্ননীড়ের অন্দরসজ্জা দেখলে যে কারো চোখ ধাঁধিয়ে যেতে বাধ্য। বাড়িটি নকশা করা হয়েছে ক্রিস্টাল, মার্বেল ও মুক্তা দিয়ে। গোটা বাড়ির বাইরের অংশ কাচ ও মার্বেল দিয়ে মোড়া। বিলাস ও বাহুল্যের চূড়ান্ত নিদর্শন এই অ্যান্টিলিয়াকে নিয়ে রয়েছে বিস্তর জল্পনা ও গুজব।
শোনা যায়, আম্বানি পরিবারের বাসভবনে নাকি শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের কোনো স্থান নেই। বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুল নয়। অ্যান্টিলিয়ার বাইরের অংশে শীতাতপ যন্ত্রের আউটডোর ইউনিটের দেখা মেলে না। কারণ আম্বানিরা চাননি অ্যান্টিলিয়ার সৌন্দর্যে কোনো রকম খুঁত থাকুক। যন্ত্রগুলো বাইরে দৃশ্যমান হলে তা অসংগতিপূর্ণ দেখাত বলে বিশেষ উপায়ে শীতল করার ব্যবস্থা করা হয় এই বাড়িটিকে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যান্টিলিয়াকে শীতল রাখা হয় একটি কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার মাধ্যমে। তবে এই বিশেষ ব্যবস্থাটি এর বাসিন্দাদের কথা মাথায় রেখে করা হয়নি। বরং বাড়ির দামি মার্বেল, ফুল ও অভ্যন্তরীণ উপাদান সংরক্ষণের কথা মাথায় রেখে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে এর। বাড়িতে আসা অতিথিরা তাপমাত্রার কমাতে বা বাড়াতে অনুরোধ করলেও সেটির হেরফের করা হয় না।
এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমে অভিনেত্রী শ্রেয়া ধন্বন্তরী জানিয়েছিলেন, একটি ফটোশুটের সময় তিনি অ্যান্টিলিয়ায় উপস্থিত ছিলেন। ঠাণ্ডা লাগতেই তিনি তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। দায়িত্বে থাকা কর্মী তাকে জানিয়েছিলেন, ব্যক্তিগত কারণে তাপমাত্রা কমানো বা বাড়ানো সম্ভব নয়। অ্যান্টিলিয়ায় মার্বেল ও ফুলের জন্য একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা প্রয়োজন এবং এসিতে সেই তাপমাত্রায় সেট করা হয়। সেটি পরিবর্তন করা হয় না বলেই শ্রেয়াকে জানানো হয়েছিল।
অ্যান্টিলিয়ায় সবচেয়ে আলোচিত বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি হলো ‘স্নো রুম’, যেখানে দেয়াল থেকে কৃত্রিম তুষারকণা ঝরে পড়ে। কৃত্রিম পদ্ধতিতে তৈরি ‘স্নো ফ্লেক্স’ ঝরে পড়ে সিলিং থেকে। ফলে আর্দ্রতা ও তাপ—দুইয়ের কোনো কিছুই বাড়ির ভেতরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়।
নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে অ্যান্টিলিয়ায়। ৫০টি আসন রয়েছে সেখানে। রয়েছে আইসক্রিম পার্লার, বড় একটি মন্দিরও। বাড়িটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল প্রায় ১৪ হাজার কোটি রুপি।
বাড়ির ছয়টি তলা বরাদ্দ করা রয়েছে শুধু গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য। বাড়ির মালিকের দেড় শতাধিক গাড়ির জন্য আলাদা এই ব্যবস্থা তা বলাই বাহুল্য। গোটা বাড়িতে রয়েছে ৯টি লিফট। ছাদে রয়েছে তিনটি হেলিপ্যাড।
অ্যান্টিলিয়ার সবচেয়ে ওপরের তলায় থাকে আম্বানি বাড়ির বড় ছেলের পরিবার। আকাশ-শ্লোকা তাদের দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন ২৭ তলায়। তাই অনেককেই বলতে শোনা যায়, তারা আক্ষরিক অর্থে আকাশের কাছাকাছি থাকেন। ১৫ হাজার কোটি রুপির বাড়ির সবচেয়ে দামি অংশ এই ২৭ তলাই।
মুকেশের মা নবতিপর কোকিলাবেন আম্বানিও থাকেন তার বড় ছেলে ও পরিবারের সঙ্গে মুম্বাইয়ের বিলাসবহুল বাসভবন অ্যান্টিলিয়ায়। মুকেশপত্নী নীতার সঙ্গেও মধুর সম্পর্ক কোকিলাবেনের। পারিবারিক অনুষ্ঠানে নীতাকে প্রায়ই তার শাশুড়ির সঙ্গে থাকতে দেখা যায়।
শুধু আকাশ-শ্লোকা নন, ২৭তলার রাজমহলে থাকেন মুকেশ-নীতা নিজেও। সদ্য ছোট ছেলে অনন্তের বিয়ে দিয়ে পুত্রবধূ রাধিকাকে ঘরে এনেছেন। রাধিকা-অনন্তও সেখানেই থাকেন। সবাইকে নিয়ে খোলামেলা জায়গায় থাকার ইচ্ছা ছিল পরিবারের কর্ত্রীর। যেখানে সব সময় আলো থাকবে, বাতাস বয়ে যাবে। যেখান থেকে গোটা শহরকে ইগলের চোখে দেখা যাবে। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে চেয়েছিলেন নীতা। তাই সপরিবার সোজা ২৭ তলায় উঠে গিয়েছিলেন।
অ্যান্টিলিয়ায় আম্বানি পরিবার তো থাকেই। সেই সঙ্গে বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আছেন ৬০০ জন কর্মচারীও। তাদের মধ্যে বাড়ির ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তারক্ষীরাও রয়েছেন। তাদের মনোরঞ্জনের জন্য রয়েছে একটি বিশাল হলঘর। অ্যান্টিলিয়াকে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখেন এই কর্মীরাই।
বাড়ির কর্মীদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে সমান নজর আম্বানি পরিবারের। ২৭ তলা বাড়ির একটি তলা তাদের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। খাওয়াদাওয়া থেকে মনোরঞ্জন—কোনো কিছুতেই নিজেদের সঙ্গে কর্মীদের ভেদাভেদ করেন না।
দুই বছর ধরে বাড়িটি বানানোর পর বাড়ির মালিকের মনে হয়েছিল, বাড়িটি বাস্তুশাস্ত্র মেনে বানানো হয়নি। ফলে ‘বাস্তুদোষ কাটাতে’ লেগেছিল আরো দেড় বছর। বিশ্বের অন্যতম বহুমূল্য ব্যক্তিগত আবাসন এটি। প্রতি মাসে এই বাড়ির বিদ্যুতের খরচই নাকি ৭০ লাখ রুপির ওপরে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা