মহান আল্লাহ মানুষের যেসব আচরণ অপছন্দ করেন

কিছু অভ্যাস এমন আছে, যেগুলো বান্দাকে আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয় করে তোলে। মানুষের নেক আমলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মানুষকে দুনিয়া-আখিরাতে নিন্দিত ও বিপদগ্রস্ত করে। তাই মুমিনের উচিত এসব অভ্যাস থেকে দূরে থাকা।

নিম্নে সে অভ্যাসগুলো তুলে ধরা হলো—

অহংকারী : অহংকারকে আরবি ভাষায় ‘কিবর’, ‘ফাখর’, ‘খুয়ালা’ ইত্যাদি বলা হয়, প্রতিটি একেকটি স্তরের অহংকার। মহান আল্লাহ প্রত্যেকটিই নিষিদ্ধ করেছেন। কিবর (অহংকার) মানে হলো, নিজেকে বড় মনে করা; অন্যদের তুলনায় নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবা।

কিবরের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) অহংকারীদের পছন্দ করেন না।

’ (সুরা : নাহাল, আয়াত : ২৩)

 

ফাখর (গর্ব) মানে হলো, বাহ্যিক বিষয় যেমন সম্পদ, বংশ মর্যাদা ইত্যাদি নিয়ে আত্মপ্রদর্শন। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর জমিনে দম্ভভরে চলাফেরা কোরো না; নিশ্চয় আল্লাহ কোনো দাম্ভিক, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ১৮)

খুয়ালা মানে হলো, এমন আত্মপ্রশংসা, যা নিজের চোখে মিথ্যা মহত্ত্বের কল্পনা তৈরি করে।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চার ব্যক্তিকে মহান মহীয়ান আল্লাহ তাআলা অপছন্দ করেন—অধিক হারে শপথকারী বিক্রেতা, অহংকারী গরিব, বৃদ্ধ ব্যভিচারী এবং অত্যাচারী শাসক। (নাসায়ি, হাদিস : ২৫৭৬)

 

গরিব হওয়া সত্ত্বেও অহংকার করা সবচেয়ে ঘৃণিত, কারণ তার কাছে তো অহংকারের কোনো উপকরণই নেই। তার উচিত ছিল বিনয়ী হওয়া, কিন্তু তার নিচু স্বভাব তাকে অহংকারে প্রলুব্ধ করেছে। অহংকার যে ধরনেরই হোক, এটি জান্নাতে প্রবেশে প্রতিবন্ধক। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬৬)

 

কৃপণ : নবী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তিনজনকে অপছন্দ করেন—মিথ্যাবাদী বাদশাহ, অহংকারী দরিদ্র ও কৃপণ ধনী।’ (তাবরানি)

কৃপণতার শেষ পরিণতি হলো আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও ধ্বংস। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে কার্পণ্য করেছে এবং নিজকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করেছে, আর যা উত্তম তা অস্বীকার করেছে, আমি তার জন্য কঠিন পথ (অর্থাৎ অন্যায়, অসত্য, হিংসা ও হানাহানির পথ) সহজ করে দেব। এবং তার সম্পদ তার কোনো কাজে আসবে না, যখন সে ধ্বংস হবে। (সুরা : লাইল, আয়াত : ৮-১১)

উল্লেখ্য, কৃপণতা নানা ধরনের হতে পারে; কেউ অর্থ নিয়ে কৃপণতা করে, কেউ জ্ঞান নিয়ে, কেউ আবার খাবার, সালাম, কথা, মর্যাদা, এমনকি নবীর ওপর দরুদ পাঠ করতেও কৃপণতা করে।

অশ্লীলতা ও কুরুচিপূর্ণ আচরণকারী : ফাহিশাহ বা অশ্লীলতা বলতে বোঝায়, যে কথা বা কাজ অত্যন্ত কুিসত ও ঘৃণ্য। এটি সুস্থ মস্তিষ্কে চিন্তা করলে যা অস্বাভাবিক ও অগ্রহণযোগ্য।

মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য অশ্লীলতা নিষিদ্ধ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা এটা পছন্দ করে যে মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ১৯)

বিশ্বনবী (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা পছন্দ করেন না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৫৫২)

আচরণে কৃত্রিমতা অবলম্বনকারী : আল্লাহ কৃত্রিমতা অবলম্বনকারীকে পছন্দ করেন না, বিশেষ করে যারা কথাবার্তায় কৃত্রিমতা অবলম্বন করতে গিয়ে আড়ম্বরপূর্ণ ও কঠিন শব্দ প্রয়োগ করে, অতি উচ্চারণ ও অপ্রয়োজনীয় শব্দ চয়নের মাধ্যমে ভাষার জটিলতা তৈরি করে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সেসব লোককে ঘৃণা করে, যারা বাকপটুত্ব প্রদর্শনের জন্য জিহ্বাকে দাঁতের সঙ্গে লাগিয়ে বিকট শব্দ করে, গরু তার জিহ্বা নেড়ে যেমন করে থাকে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০০৫)

মহান আল্লাহ আমাদের এসব অভ্যাস থেকে হেফাজত করুন। অতীতের ভুলগুলো ক্ষমা করুন। আমিন।