বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক সভাপতি ও সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এরই অংশ হিসেবে সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিসিবিতে একটি চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। চিঠিতে ২৭ ধরনের তথ্য ও রেকর্ড চাওয়া হয়েছে।

দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম জাগো নিউজকে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি।

এছাড়া পাপনের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালক সাইদুজ্জামানকে দলনেতা করে তিন সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে। দলের অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এবং উপসহকারী পরিচালক সুবিমল চাকমা।

চিঠিতে সাত কর্মদিবসের মধ্যে চাওয়া তথ্য ও নথিপত্র সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত নথি জাগো নিউজের সংগ্রহে রয়েছে।

পাপনের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি বিসিবি ও সরকারি অর্থের অপব্যবহার করে নিজ এবং পরিবারের সদস্যদের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার করেছেন।

চিঠিতে বিসিবির কাছে যেসব নথি চাওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- পূর্বাচলে স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য পরামর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় পত্রিকায় প্রকাশিত ইওআই বিজ্ঞাপনের কপি, ইওআই ডকুমেন্ট অনুমোদনের চিঠি, ইওআই-এর বিজ্ঞাপন, ইওআই-এর সব মূল্যায়ন প্রতিবেদন, পরামর্শকদের ইওআই জমাদানের রেকর্ড, ইওআই-এর ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত যাবতীয় নথিপত্র, কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব (টেকনিক্যাল ও ফাইন্যান্সিয়াল প্রপোজাল), ইওআই-তে যোগ্য ঘোষিত প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা, প্রস্তাব ডকুমেন্ট অনুমোদনের কপি, মূল্যায়ন মানদণ্ড, কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন, এলওআই বা কার্যাদেশের কপি, পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন নথি ও পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে তার রেকর্ড, পরামর্শক নিয়োগের গোপন ব্যয় নিরূপণ সংক্রান্ত নথি এবং সম্পাদিত চুক্তিপত্রসহ সব রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত অনুলিপি।

এছাড়া পূর্বাচল স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য কোন পদ্ধতিতে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে (পূর্ব যোগ্যতা যাচাই বা দুই খাম পদ্ধতি বা এক খাম পদ্ধতি) তার উল্লেখসহ পদ্ধতি অনুমোদনের কপি, অনুমোদিত দরপত্র ডকুমেন্ট, অনুমোদিত দরপত্র বিজ্ঞপ্তির কপি, পত্রিকায় প্রকাশিত দরপত্র বিজ্ঞপ্তির কপি, জমাকৃত সব দরপত্রের কপি, কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন, দরপত্র অনুমোদনের চিঠি, কার্যাদেশ (এনওএ) এবং চুক্তিপত্রের কপি, ভূমি উন্নয়ন কাজের বিল পরিশোধ সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র (প্রি-সেকশন ও পোস্ট সেকশনের কপিসহ), বিল পরিশোধের কার্যাদেশের পরিমাণের সঙ্গে সম্পন্নকৃত কাজের যদি কোনো পার্থক্য থাকে তার অনুমোদন কপি, অনুমোদিত মূল ব্যয় নিরূপণ ও (যদি থাকে) সংশোধিত অনুমোদিত ব্যয় নিরূপণ কপি, প্রকল্প প্রস্তাবনার (ডিপিপি) কপি, প্রকল্প অনুমোদনপত্র, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত মালামালের আমদানির নথি এবং স্টেডিয়াম নির্মাণের জমি ক্রয় বা অধিগ্রহণ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত অনুলিপি চাওয়া হয়েছে।

চিঠিতে নাজমুল হাসান পাপনের দায়িত্ব পালনকালে বিসিবির আয়-ব্যয় সংক্রান্ত অডিট প্রতিবেদন এবং আইসিসি ও এসিসি থেকে লভ্যাংশ প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালার সত্যায়িত কপি, লজিস্টিকস ও প্রটোকল বাবদ খরচের বিবরণ ও রেকর্ডের সত্যায়িত কপি, বিপিএল বাবদ খরচের বিবরণ এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি, বিদেশি কোচ নিয়োগে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের নাম ও ঠিকানা, বিদেশি কোচ নিয়োগের নীতিমালা এবং সম্মানী বা বেতন-ভাতা পরিশোধের রেকর্ডের সত্যায়িত অনুলিপি, বিসিবির অর্থ বিভাগ, লজিস্টিকস ও বিপিএল দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিস্তারিত ব্যক্তিগত তথ্যসহ ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সাবেক এমপি পাপনের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে ‘ক্রিকেট সেলিব্রেটস মুজিব ১০০’ নামে প্রকল্পে ব্যয়িত অর্থের রেকর্ডপত্র ও নোটশিট, এ. আর. রহমানের কনসার্ট আয়োজন সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র ও নোটশিট, বঙ্গবন্ধু বিপিএলের (২০১৯) আয়োজনে ব্যয়িত অর্থের রেকর্ডপত্র ও নোটশিট, অডিট ফার্মের তালিকা ও বিল পরিশোধ সংক্রান্ত রেকর্ডের সত্যায়িত কপি, বিসিবি কর্তৃক কার্যাদেশপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলোর বিস্তারিত তালিকা (অর্থবছর, প্রকল্পের নাম ও আইডি নম্বর, বরাদ্দকৃত ও পরিশোধিত অর্থ, কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারের নাম-ঠিকানা-মোবাইল নম্বর, প্রকল্প পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নাম-ঠিকানা এবং মন্তব্যসহ) প্রয়োজন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছে দুদক।

পাপনের দায়িত্বকালীন সময়ে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভাগুলোর খরচের রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি, ক্রিকেটের তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ক্লাবসমূহের তালিকা এবং বাছাই কমিটির কার্যপরিধির (টিওআর) সত্যায়িত কপি, ২০১২-১৩ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বিসিবির পরিচালনা পরিষদের সভাগুলোর সংখ্যা এবং খাতভিত্তিক খরচের তালিকা ও অডিট প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে।

বিসিবির অর্থায়নে বিদেশে ভ্রমণকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের বিস্তারিত তালিকা, তাদের ব্যয় বিবরণী ও বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত নীতিমালার সত্যায়িত কপি, ক্রিকেট ম্যাচ দর্শনের জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহারের খরচের রেকর্ড এবং সভাপতির হেলিকপ্টার ব্যবহারের নীতিমালাসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি এবং স্টেডিয়াম নির্মাণ, সংস্কার ও শোভা বৃদ্ধি সংক্রান্ত উন্নয়নকাজের তালিকা ও সব সংশ্লিষ্ট টেন্ডার ডকুমেন্টস থেকে বিল পরিশোধ পর্যন্ত রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত কপি সংগ্রহের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।