যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সাহায্যে কাটছাঁটের মধ্যে বিশ্বব্যাপী হাম, মেনিনজাইটিস ও হলুদ জ্বরের মতো টিকা প্রতিরোধযোগ্য রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জাতিসঙ্ঘ ও গ্যাভি ভ্যাকসিন জোট বুধবার সতর্ক করেছে।
গত পাঁচ দশকে টিকা ১৫ কোটিরও বেশি জীবন বাঁচিয়েছে উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবায় তহবিল হ্রাস এই কষ্টার্জিত অর্জনগুলোকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।’
তিনি আরো বলেন, বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান রোগের প্রাদুর্ভাব জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে এবং দেশগুলোকে রোগের চিকিৎসার ব্যয় বৃদ্ধির সম্মুখীন করছে।
উদাহরণস্বরূপ তিনি হামের প্রকোপের কথা উল্লেখ করে বলেন, তা বিপজ্জনকভাবে ফিরে আসছে। ২০২১ সাল থেকে প্রতি বছর হাম আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ২০২৩ সালে এর সংখ্যা আনুমানিক এক কোটি তিন লাখে পৌঁছেছে, যা ২০২২ সালের পর থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রবণতা ২০২৪ ও ২০২৫ সালেও অব্যাহত থাকবে বলে সংস্থাগুলো মনে করছে।
ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপির উদ্ধৃতি দিয়ে বাসস জানিয়েছে, গত ১২ মাসে ১৩৮টি দেশে হামের প্রাদুর্ভাবের কথা জানা গেছে, যার মধ্যে ৬১টিতে বড় প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ২০১৯ সালের পর থেকে ১২ মাসের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ সংখ্যা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসঙ্ঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ ও গ্যাভি যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে। ২৪-৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্ব টিকাদান সপ্তাহের শুরুতে বুধবার বিবৃতিটি প্রকাশিত হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে আফ্রিকায় মেনিনজাইটিস ও হলুদ জ্বরের আক্রান্তও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রমবর্ধমান ভুল তথ্য, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও মানবিক সংকটের মধ্যে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে মার্কিন মানবিক সহায়তায় ব্যাপক হ্রাসের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ না করে গোষ্ঠীগুলো বলেছে, তহবিল হ্রাস অগ্রগতিকে বিপন্ন করে তুলেছে এবং লাখ লাখ শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
এদিকে ইউনিসেফের প্রধান ক্যাথেরিন রাসেল জানান, ‘বিশ্বব্যাপী তহবিল সংকট ভঙ্গুর ও সংঘাত-প্রবণ দেশগুলোয় হামের বিরুদ্ধে এক কোটি ৫০ লাখের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ শিশুকে টিকা দিতে আমাদের ক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে সীমিত করছে।’
কোভিড-১৯ মহামারীর পরে দেশগুলো তাদের টিকাদানের বাধাসমূহ পূরণ করার চেষ্টা করা সত্ত্বেও নিয়মিত টিকাদান থেকে বঞ্চিত শিশুদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩ সালে আনুমানিক এক কোটি ৪৫ লাখ শিশু তাদের নিয়মিত টিকা ডোজ থেকে বাদ পড়েছে। ২০২২ সালে নিয়মিত টিকা ডোজ থেকে বাদ পড়া শিশুর সংখ্যা ছিল এক কোটি ৩৯ লাখ।
এই প্রেক্ষাপটে ২০২৬-২০৩০ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৮০ লাখ জীবন বাঁচাতে ও ৫০ কোটি শিশুকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে গ্যাভি ২৫ জুনের প্রতিশ্রুতি শীর্ষ সম্মেলনের আগে কমপক্ষে নয় বিলিয়ন ডলার তহবিলের আহ্বান জানিয়েছে।