পেঁয়াজের দাম বাড়ছে, বাড়ছে ভোক্তার ভোগান্তি
রাজবাড়ীর বাজারে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৫ টাকা। মৌসুমের শেষ দিকে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে চাষিরা কিছুটা সন্তুষ্ট, অন্যদিকে ভোগান্তিতে সাধারণ ক্রেতারা।
রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা মাঠের পেঁয়াজ ঘরে তুলে মজুদ করছেন। অনেকেই প্রয়োজন অনুযায়ী বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। ফলে বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে বলে জানান অনেকে।
সদর উপজেলার চন্দনী গ্রামের চাষি আফজাল হোসেন জানান, “পেঁয়াজ এখন শুকনো, তাই ওজন বেড়েছে। আমরা ঘরে মজুদ করে রাখছি যেন ভালো দামে বিক্রি করতে পারি।” তিনি বলেন, এখন বাজারে যে দাম, এতে আমাদেও লোকসান হয়। বাধ্য হয়ে ঘরে রেখে দেওয়া হচ্ছে।
একই এলাকার চাষি আহমেদ আলী বলেন, অপ্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমরা ঘরে রেখে দিচ্ছি। দাম বৃদ্ধি পেলে বিক্রি করবো। কারণ কিছু দিন পূর্বে পেঁয়াজের যে দাম ছিল এতে লোকসান গুনতে হয়েছে আমাদের মত কৃষকের। তিনি বলেন, কৃষক ফসল উৎপাদন করে ঘরে মুনাফা নিতে পারে ননা। এখন সাধারণ কৃষক অপ্রয়োজনীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না। তারা এখন ঘরে রাখা শুরু করছেন। এতে বাজারে হয়ত কিছুটা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলার একাধিক পেঁয়াজ চাষী বলেন, ভরা মৌসুমে আমাদের মত চাষীরা পেঁয়াজের উপযুক্ত দাম পাইনি। লোকসানে বিক্রি করতে হয়েছে। তবে শেষ সময়ে এসে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জেলার সাধারণ কৃষক কিছু লোকসান কাঁটিয়ে উঠতে পারবে। তবে বেশির ভাগ কৃষক অধিকাংশ পেঁয়াজ বিক্রি করে দিয়েছে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বাড়ার অন্যতম কারণ মাঠে নতুন পেঁয়াজ না থাকা ও আমদানি কমে যাওয়া। রাজবাড়ীর বড় পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মতিউর রহমান মুন্না বলেন, “বাজারে প্রয়োজন ৫শত মণ, কিন্তু বাজারে আসছে মাত্র ৩শত মণ। তাই দাম বাড়ছেই।” তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী পেঁয়াজ ক্রয় করে রেখে দিচ্ছেন।
খুরচা বিক্রেতারা বলছেন, কৃষজের বাজার গত সপ্তাহের চেয়ে কেজি প্রতি ১০/১৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আমাদের এতে কোন পরিবর্তণ নেই। কারণ আমরা খরচা বিক্রেতারা প্রতিদিন মহাজনের নিকট থেকে ক্রয় করি। যেকারণে দাম বৃদ্ধি পেলে আমাদের কোন লাভ হয় না। বরং ক্রেতার সাথে অনেক সময় বাক-বিতক্তা হয়।
আবার সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, চাষি ও ব্যবসায়ীদের মজুদের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি সময় কৃষক মজুদ করতো ন্ াএখন কৃষক ঘরে মজুদ করে রাখছে। ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সাধারণ কৃষকরা মজুদ করায় হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে বাজারে কম সরবরাহ হওয়ায় পেঁয়াজের দামের ঊর্ধ্বগতির মূল কারণ। এতে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা, তবে চাপ পড়ছে সাধারণ ভোক্তার ওপর।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলায় ৩৭ হাজার ২৮৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে এবং ৫ লাখ ২৫ হাজার টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম রাসুল জানান, “বর্তমানে বাজার দরে কৃষকেরা লোকসানে নেই।”