সাতকানিয়ায় বাবার ধর্ষণে মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ষষ্ঠ শ্রেণিপড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে বাবাকে আটক করে সাতকানিয়া থানা পুলিশের নিকট সোপর্দ করে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির মা ও আত্মীয়-স্বজনরা।বৃহস্পতিবার ২৪ এপ্রিল সকাল ৮ টার দিকে উপজেলার কেরানিহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অভিযুক্ত বাবাকে আটক করে সাতকানিয়া থানায় এনে পুলিশের নিকট সোপর্দ করা হয়।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত বাবা মোহাম্মদ আলী (৪০)। তিনি উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মনোহর চৌধুরী পাড়ার বাসিন্দা মৃত এমদাদ আলীর পুত্র। ষষ্ঠ শ্রেণিপড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় মেয়ের মা অর্থাৎ অভিযুক্তের স্ত্রী নাহিদা আক্তার (২৪ এপ্রিল) সকালে বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সাতকানিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলীর সাথে বাদী নাহিদা আক্তারের পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। তাদের সংসারে দুটি ছেলে ও দুটি মেয়ে রয়েছে। ধর্ষণের শিকার বড় মেয়ের বয়স এখনো ১২ বছর। সে উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের কেফায়েত উল্লাহ কবির আহমদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত। বিগত ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পেট ব্যাথাসহ বমি শুরু হয়। মা নাহিদা আক্তার মেয়েকে বমি ও পেট ব্যাথার কারণ জানতে চাইলে সে ভয়ে ধর্ষণের বিষয়টি গোপন রেখেছিল।

আরও জানা যায়, পরে বাদী ২২ এপ্রিল তার মেয়েকে অভিযুক্ত বাবা মোহাম্মদ আলীর সাথে উপজেলার কেরানীহাটে অবস্থিত একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠান। ওই সময় হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিবাদীর মুঠোফোন থেকে কল দিয়ে বাদীকে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বলেন। বাদী অর্থাৎ ধর্ষণের শিকার মেয়েটির মা তাৎক্ষণিক হাসপাতালে গিয়ে দেখেন তার মেয়ে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে।

পরবর্তীতে তিনি চিকিৎসকের কাছ থেকে তার মেয়ের কি হয়েছে জানতে চান। ওই সময় চিকিৎসক জানান আর মেয়ে গর্ভবতী। মেয়েটি গর্ভবতী হওয়ার কারণে তার পেট ব্যাথাসহ বিভিন্ন ধরনের শরীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরে অভিযুক্ত বাবা মোহাম্মদ আলীর অনুরোধে কর্তব্যরত চিকিৎসক মেয়েটির গর্ভপাত করান।

পরে বাদী তার মেয়েকে এ ঘটনাকে কে ঘটিয়েছে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রাত ১২ টার দিকে ও ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১ টার দিকে দু'দফায় তার শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে মেয়েটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন তারই বাবা মোহাম্মদ আলী। এ ঘটনা কাউকে প্রকাশ করলে মেয়েটিকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। পরে বাদী তার ভাই মো. নাজিম উদ্দিনকে মুঠোফোনে কল দিয়ে হাসপাতালে ডেকে আনেন। ওই সময় তারা ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মোহাম্মদ আলী ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে অভিযুক্ত বাবাকে আটক করে সাতকানিয়া থানা পুলিশের নিকট সোপর্দ করা হয়।

মামলার বাদী ও ধর্ষণের শিকার মেয়েটির মা নাহিদা আক্তার বলেন, ‌মেয়েকে গর্ভপাত করানোর পরে মেয়ের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করলে সে আমাকে জানায় তার বাবা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ধর্ষণের বিষয়ে আমার স্বামী মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে এ বিষয়ে কাউকে না জানানোর জন্য অনুরোধ করেন। এক পর্যায়ে আমি মুঠোফোনে কল দিয়ে আমার ভাই মো. নাজিম উদ্দিনকে হাসপাতালে ডেকে আনি। এরপর তার সহায়তায় আমার স্বামীকে থানায় এনে পুলিশের নিকট সোপর্দ করেছি। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় তার মা ও আত্মীয়-স্বজনরা অভিযুক্ত বাবাকে থানায় এনে পুলিশের নিকট সোপর্দ করেছে। এ ঘটনায় মেয়েটির মা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে আসামিকে আদালতে প্রেরণ করা হবে।